তবে কাতার ওই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, প্রতিবেশী দেশগুলোর সমন্বিত এই সিদ্ধান্ত ‘দুঃখজনক ও ভিত্তিহীন’।
রয়টার্স জানিয়েছে, সোমবার আলাদা বিবৃতিতে পাঁচটি দেশ কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেয়।
এর মধ্যে উপসাগরীয় তিন দেশ সৌদি, বাহরাইন ও আমিরাত দুই সপ্তাহের মধ্যে তাদের ভূখণ্ড থেকে কাতারের সব নাগরিককে চলে যেতে নির্দেশ দিয়েছে।
ইরানের সঙ্গে সৌদি প্রভাব বলয়ের দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে কাতারের সঙ্গে পাঁচ দেশের সম্পর্ক ছিন্নের এই ঘোষণা এল, যাকে ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর মধ্যে বিভক্তির ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়াত্ত বার্তা সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, রিয়াদ ইতোমধ্যে কাতারের সঙ্গে সীমান্ত আটকে দিয়ে স্থল, নৌ ও আকাশ পথে সব ধরনের যোগাযোগের পথ বন্ধ করে দিয়েছে।
এক সৌদি কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে এসপিএ লিখেছে, “সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদের বিপদ থেকে সৌদি আরবের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য এই পদক্ষেপ জরুরি ছিল।”
সব মিত্র দেশ ও সব কোম্পানিকেও একই পথে হাঁটার আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরব। কাতার সরকার ইরান সমর্থিত মিলিশিয়াদের সমর্থন দিচ্ছে বলেও সৌদি সরকারের অভিযোগ।
সৌদি সমর্থিত ইয়েমেন সরকারও ইরান সমর্থিত হুতিদের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ এনে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দিয়েছে।
মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের আকাশসীমা বা বন্দর কাতারের উড়োজাহাজ বা নৌযানের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, মুসলিম ব্রাদারহুডের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনকে মদদ দেওয়ার কারণে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মিশর।
আরব আমিরাতের রাষ্ট্রায়াত্ত বার্তা সংস্থা ডব্লিউএএমের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, দেশটি সম্পর্ক ও যোগাযোগ ছিন্নের পাশাপাশি কাতারের কূটনীতিকদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমিরাত ত্যাগ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরব আমিরাতভিত্তিক ইতিহাদ, এমিরেটস ও ফ্লাইদুবাই এরই মধ্যে কাতারে যাওয়া-আসার সব ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করেছে।
বাহরাইন তাদের ঘোষণায় কাতারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে সহযোগিতার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপেরও অভিযোগ এনেছে।
বিবিসি লিখেছে, ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে থাকা সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন জোট থেকেও কাতারকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, দোহার কর্মকাণ্ড ‘সন্ত্রাসবাদে রসদ যোগাচ্ছে’। আল-কায়েদা ও ইসলামিক স্টেটের মত সংগঠনগুলোকেও ‘কাতার মদদ দিচ্ছে’।
সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর অংশ হিসেবে কাতারের জঙ্গি বিমানও হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযানে অংশ নিয়েছিল।
প্রতিবেশীদের সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় কাতার বলেছে, যেসব অভিযোগ তুলে প্রতিবেশীরা ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা ভিত্তিহীন।
“তাদের এ সিদ্ধান্ত অন্যায়। যেসব অভিযোগ ও দাবি করা হয়েছে, সেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই,” কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে লিখেছে আল জাজিরা।
সৌদি আরবের এক সময়ের ঘনিষ্ট মিত্র কাতার বলছে, প্রতিবেশীদের এমন সিদ্ধান্ত ‘দেশের নাগরিক ও বসবাসকারীদের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলবে না’।
মে মাসের শেষ দিকে কাতারের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার ওয়েবসাইটে আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানিকে উদ্ধৃত করে একটি বক্তব্য আসে, যেখানে ইরান, হামাস, হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানানোর পাশাপাশি বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশিদিন টিকবেন না।
কাতার সরকার দাবি করে আসছে, ওই উক্তি তাদের আমিরের নয়। আর কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আলজাজিরা লিখেছে, ওই উক্তি আমিরের নামে চালানো হয়েছিল হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে।
তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে নতুন উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন সোমবার এক বিবৃতিতে উপসাগরীয় দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
“আমরা সবাইকে আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য নিরসনের আহ্বান জানাই। এক্ষেত্রে আমাদের কোনো সহযোগিতা যদি প্রেয়োজন হয়, আমরা মনে করি, গাল্ফ কোঅপারেশন কাউন্সিলের ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন।”